কৃমি

কৃমি হলে কি করবেন? কেন হয় তার প্রতিকার এবং ব্যাবস্থা ।

কৃমিকে হেলমিন্থ’ও বলা যেতে পারে, বিশেষ করে চিকিৎসার পরিভাষায় যখন পরজীবী কৃমি, বিশেষ করে নেমাটোডা (রাউন্ডওয়ার্ম) এবং সেস্টোডা (টেপওয়ার্ম) যা তাদের হোস্টের অন্ত্রে বাস করে।

যখন একটি প্রাণী বা মানুষের “কৃমি আছে” বলা হয়, এর মানে হল যে এটি পরজীবী কৃমি দ্বারা আক্রান্ত।

মানুষ নানা প্রকার কৃমিতে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন প্রকার কৃমির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কেঁচো কৃমি, সুতা কৃমি, বক্র কৃমি ও ফিতা কৃমি । সব কৃমি একইভাবে সংক্রমন হয় না। বক্র কৃমি আক্রান্ত মানুষের যেখানে সেখানে মল ত্যাগ করলে সেখান থেকে কৃমির লার্ভা মানুষের পায়ের চামড়া ভেদ করে রক্ত নালীতে প্রবেশ করে। যারা খালি পায়ে মাটিতে চলাফেরা করেন। তারাই এ কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশী। বাংলাদেশের মানুষ গোল কৃমিতে বা কেঁচো কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশী। এসব কৃমি মানুষের পাকস্থলির ক্ষুদ্রান্ত্রে বসবাস করে নানা রোগ সৃষ্টি করে। পিত্তনালীতে প্রবেশ করে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়ে জন্ডিস রোগ সৃষ্টি করতে পারে। গোল কৃমি বা কেঁচো কৃমি সাধারণ গোল, পাতলা, সাদা বা গোলাপি রঙের হয়। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ১০-১২ সে.মি. লম্বা হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক গুড়া কৃমি বা পিনওয়ার্ম সাধারণত ১/৪ থেকে ১/২ ইঞ্চি (প্রায় ৬ থেকে ১৩ মিলিমিটার) লম্বা হয়। সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল মলদ্বারে চুলকানি, বিশেষ করে রাতে, কারণ স্ত্রী কৃমি আক্রান্ত ব্যাক্তি ঘুমিয়ে পরলে তার মলদ্বারে ডিম পাড়ার জন্য নেমে আসে। আক্রান্ত ব্যক্তি যখন ঘুমাচ্ছেন, তখন স্ত্রী পিনওয়ার্ম মলদ্বারের চারপাশের ত্বকের ভাঁজে হাজার থেকে লক্ষ-লক্ষ ডিম পাড়ে। পিনওয়ার্মে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না, তবে কিছু লোক মলদ্বারে চুলকানি এবং অস্থির ঘুম অনুভব করে। পিনওয়ার্মের সংক্রমণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুলে যাওয়ার বয়সী শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং সহজেই শিশু থেকে শিশুতে ছড়িয়ে পরে।

সাধারণত অপরিষ্কার শাকসবজি, ফলমূল, নোংরা খাবার, বাসি খাবার, দূষিত পানির মাধ্যমে কেঁচো কৃমির ডিম আমাদের মুখে প্রবেশ করে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় চোপড় হাত, পা সঠিকমত না ধুয়ে নখের মাধ্যমে আঙুলের ভাজে লেগে থাকা ডিম খাওয়ার সময় খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের পেটে প্রবেশ করে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে বাসা বানায়। পরে স্ত্রী কৃমিরা এখানে ডিম দেয়। একটি স্ত্রী কৃমি দৈনিক প্রায় ২ লক্ষ ডিম দেয়। মানুষের অন্ত্রে ১০-৪০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। পরে মানুষের মলের সাথে বাহিরে নিষ্কাশিত হয়। সুতা কৃমি দেখতে সুতার মতো, ছোট, পাতলা ও সাদা বর্ণের এরা সাধারণত মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে। কিন্তু বড় হয়ে উঠলে সেখান থেকে বৃহদান্ত্রের কোলনে আশ্রয় নেয়। বক্রকৃমির মুখ ছোট গাঢ় গোলাপী রঙের এরা এত ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। এটি মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে হুকের মাধ্যমে রক্ত চুষে খেয়ে বেঁচে থাকে। প্রতিটি কৃমি প্রতিদিন ০.০৩-০.২ মিলিলিটার রক্ত এবং প্রতি ১২টি কৃমি ১% হেমোগ্লোবিন শরীর থেকে কমিয়ে দেয়। ফিতা কৃমি সাধারণত পেটে একটি মাত্র থাকে। তবে বেশীও থাকতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্ক এ কৃমি ২-৩ মিটার লম্বা হয়।

মানুষের শরীরে প্রয়োজন নেই এ ধরনের একটি পরজীবী এটি, যা শরীরের ভেতরে বংশবিস্তার করে। যে কোনো কৃমির সংক্রমণ হলে শিশু খেতে চায় না, শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, রক্তস্বল্পতার কারণে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিছু কিছু কৃমি অন্ত্রে এমনভাবে থাকে যা খুব অল্প পরিমাণে হলেও দিনের পর দিন রক্ত শুষে নিতে থাকে। আমাদের দেশে ১০ বছরের নিচের শিশুরা কৃমিতে খুব বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুরা যেসব সমস্যায় ভোগে তার মধ্যে কৃমির সমস্যা অন্যতম।

শিশুর শারীরিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে কৃমি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে শিশুদের কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়। পরিবারে একজনের কৃমি হলে অন্যদেরও হতে পারে। অপরিষ্কার খাবার, দূষিত পানি ও অপরিষ্কার হাত মুখে দিলে এটা বেশি ছড়ায়। যেমন- খালি পায়ে চলাফেরা করলে। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা খালি পায়ে থাকে, তাই সেখানে শিশুদের কৃমি বেশি হয়। মাটিতে হাঁটলে কিংবা খালি হাতে মাটি স্পর্শ করলে কৃমির লার্ভা ত্বকের মাধ্যমে ঢুকে পড়তে পারে মানবদেহে। তবে কৃমির সংক্রমণের ভয়ে মাটির সংস্পর্শ পুরোপুরি এড়িয়ে শিশুকে বড় করতে চাইলে তা হবে খুব বড় এক ভুল। সুযোগ থাকলে শিশুদের মাটিতে খানিক লাফঝাঁপ করার স্বাধীনতা দিন। কাদামাটি হাতে খেলতেও দিন। শৈশব হোক প্রাণোচ্ছল। শৈশবের উচ্ছ্বাসে বাধা না দিয়ে বরং সতর্কতা হিসেবে কৃমির ওষুধ খাইয়ে দিন শিশুকে।

মূলত ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন না থাকলে কৃমি প্রতিরোধ করা বড়ইকঠিন।

শিশুর কৃমি হয়েছে কীভাবে বুঝবেন ?

১. শিশুর খাবারে রুচি কমে যায়, একদমই খেতে চায় না।

২. পেট ফুলে যায়, বদ হজম হয়।

৩. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়।

৪. শিশু ফ্যাকাশে হয়ে যায়, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

৫. বমি ভাব বা বমি হতে পারে।

৬. মলদ্বারে প্রচুর চুলকানি হয়।

৭. মলত্যাগের সময় কৃমি দেখতে পাওয়া যেতে পারে।

৮. কিছু কিছু কৃমি আছে, যেগুলোর কারণে ত্বকে অ্যালার্জিক সমস্যা হয়।

শিশুর যাতে কৃমি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে প্রথমে। আর যদি কৃমি হয়েই যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। কৃমি যে শুধু শিশুর হবে তা নয়, সব বয়সের মানুষেরই হতে পারে। এজন্য যে বাচ্চার কৃমি হয়েছে সে ছাড়াও পরিবারের সব সদস্য, এমনকি যদি গৃহপরিচারিকা থাকে তার পরিবারসহ সবাইকে একসঙ্গে কৃমির ওষুধ খেতে হবে। কারণ যদি একজনের পেটে কৃমি থেকে যায়, তাহলে তার কাছ থেকে যেকোনোভাবেই আবার কৃমির ডিমগুলো আরেকজনের পেটে চলে যেতে পারে, সেখান থেকে আবার কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।

শিশুরা যাতে প্রত্যেকবার মলত্যাগ করার পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধুলাবালি, ময়লা, আবর্জনা ধরার পরে হাত যাতে মুখে না দেয় এবং হাত যাতে ভালো করে ধুয়ে ফেলে তা দেখতে হবে। কাঁচা খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। মাঠ থেকে সদ্য উঠিয়ে আনা কাঁচা সবজিতে কৃমি থেকে যায়। ফলমূল, সবজি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে। সঠিক নিয়মে রান্না করা খাবার খেতে হবে। । নখ ছোট রাখতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং অন্যান্য কাজেও পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে। নিয়ম মেনে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে। কৃমি বিভিন্ন ধরনের হয়। লম্বা কৃমি ক্ষুদ্রান্তে অনেক বেশি পরিমাণে বংশবিস্তার করে অন্ত্রে আটকে যায়। খাবার নিচের দিকে যেতে বাধাগ্রস্ত হয় তখন পেট ফুলে যায়। পেটে অনেক বেশি কৃমি হয়ে গেলে বের করা যায় না, পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। খুব বেশি হয়ে গেলে তখন এই কৃমি বের করার জন্য অনেক সময় অপারেশন করারও প্রয়োজন পড়ে। কখনো কখনো পিত্তথলির নালিতে কৃমি আটকে গিয়ে বড় ধরনের জটিলতা হয়। এটা শিশুদের জন্য তো বটেই- বড়দের জন্যও ঝুঁকির ব্যাপার।

অতএব, কৃমি সংক্রমণ- “অবহেলা নয়”।

শিশুর অপুষ্টির একটি বড় কারণ কৃমি। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ বছরের নিচে প্রায় ৩৯ শতাংশ শিশু কৃমিতে আক্রান্ত। তাই কৃমি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের উপসর্গহীন ভাবে বহু শিশু কৃমির সমস্যায় ভোগে থাকে। এই ক্রিমি গুলি পরে হয়ে দাঁড়ায় বহু সমস্যার সূত্রপাত। পেটের ভেতর থাকা কৃমির কারণে রক্তক্ষরণ হয় অন্ত্রে। বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু আক্রান্ত শিশুটি রক্তস্বল্পতায় ঠিকই ভুগতে থাকে। কোনো মেয়েশিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগলে কৈশোরে তা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। শিশুরা খাবার থেকে যে পুষ্টি উপাদান পায়, তার অন্ত্র থেকে সেসবের অনেকটাই শোষণ করে নেয় এই পরজীবী কৃমি। ফলে অপুষ্টিতেও ভোগে সে। কৃমি আকারে খুবই ছোট। প্রায় দেখাই যায় না। অনেক কৃমি শরীরে থাকলে প্রতিদিনই বেশ কিছু পরিমাণ রক্ত হারিয়ে যায়। ফলে শিশু বা বড়রা’ও অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগে। কৃমি আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে কৃমি ও কৃমির ডিম ছড়ায়। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত না হলে মাটিতে পড়া ফলমূল বা মাটির সংস্পর্শে আসা কাঁচা সবজির মাধ্যমে সহজেই কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাতের নখের মাধ্যমেও সংক্রমণ হতে পারে।

ছোটবেলা থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়মকানুন মেনে চলা প্রয়োজন। খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার নিয়ম শিখিয়ে দিন শিশুকে। যিনি শিশুর খাবার তৈরি করেন কিংবা পরিবেশন করেন, তাঁকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলতে হবে। ফলমূল ও কাঁচা সবজি ধুয়ে নিতে হবে খুব ভালোভাবে। বাড়ির সবারই নখ ছোট রাখা জরুরি।

কৃমির সংক্রমণের উপসর্গ থাকুক আর না থাকুক, শিশু-কিশোরদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। বাড়ির অন্য সদস্যরাও সেদিনই খেয়ে নিন কৃমির ওষুধ। তবে বয়স এক বছর পূর্ণ না হলে এই ওষুধ দিতে নেই। সরকারিভাবে বছড়ে এক বার ক্রিমির ঔষধ খাওয়োনা হয়ে থাকে। ওই দিন বাসার অন্য সব সদস্যরাও যেন ক্রিমির ঔষধ খেয়ে নেয়। অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মা এবং গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, এমন নারী বাদে অন্য সবাইকে দেওয়া যায় এই ওষুধ। তবে অল্প কিছু মানুষের কৃমির ওষুধে অ্যালার্জি থাকতে পারে। তাঁদের কৃমির ওষুধ দেওয়া যাবে না।

কৃমি হলেও ওষুধের মাধ্যমে দূর করার উপায় আছে। কিন্তু অনেকে নানা ভুল ধারণার জন্য ভয়ে কৃমির ওষুধ খান না। শিশুদেরও খাওয়াতে চান না। কিন্তু ওষুধ নিয়ম মেনে খেলে আর সহজ কিছু উপায় মেনে চললে সহজেই কৃমি দূর করা যায়।

প্রতি তিন মাস পরপর পরিবারের সবাই একটি করে অ্যালবেনডাজল বড়ি সেবন করতে পারেন। মেবেনডাজল হলে খেতে হবে পরপর তিন দিন। সাত দিন পর আরেকটা ডোজ খাওয়া যায়। শিশুদেরও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে। দুই বছরের নিচে কোনো শিশুকে খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কৃমি হলে পায়ুপথ চুলকায় বলে শিশুরা সেখানে হাত দেয়। পরে আবার সেই হাত মুখে দেয়। এভাবেই সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। তবে পায়ুপথ চুলকানো মানেই কৃমি সংক্রমণ নাও হতে পারে। পায়ুপথ চুলকানীর অন্য কারন ও থাকে।

কৃমি শরীরের আমিষ জাতীয় উপাদানগুলো খেয়ে ফেলে বলে শিশু মাছ-মাংস খেলেও তা তার বৃদ্ধিতে বিশেষ কাজে আসে না। কৃমি পরজীবী প্রাণী। এরা মূলত খাবার বা পানির মাধ্যমে পায়ের পাতা দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। মিষ্টি হলো শর্করা জাতীয় খাবার। সুতরাং মিষ্টি খেলে কৃমি হবে। এমন ধারণা ভুল। আবার চিরতার রস খেলে কৃমি মরে যাবে, এরও কোনো ভিত্তি নেই। অনেক ক্ষেত্রেই রেজিসট্যান্ট কৃমি পাওয়া যায়। হতে পারে রেজিসট্যান্ট কৃমি একটা নির্দিষ্ট ঔষধে মারা যায়নি। এরকম হলে অন্য ঔষধ বা কম্বিনেশন ঔষধ প্রয়োজন হতে পারে। ঔষধে কৃমি মারা যাওয়ার পর পুনরায় যদি কারো হাতের মাধ্যমে কৃমির ডিম বা লার্ভা বাচ্চার মুখে যায় তবে পুনরায় কৃমি হতে পারে। এজন্য পুরো পরিবার একসাথে ঔষধ খাওয়া উচিত। এরপর কাজ না করলে ডাক্তার দেখাতে হবে। এমন হতে পারে যে কৃমির ঔষধে পেটের কৃমি মারা গেলেও বাচ্চার হাইজিন ঠিক নাই। মানে বাচ্চা খালি পায়ে টয়লেটে যায়, ময়লা জিনিস মুখে দেয় অথবা অপরিষ্কার হাত মুখে দেয় ফলে পুনরায় কৃমি হয়।

কৃমির ওষুধ খেলে পেট গরম হয়, শরীর খারাপ করতে পারে, মাথার সমস্যা হতে পারে—এমন কিছু কুসংস্কারও প্রচলিত আছে। কৃমির ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মমাফিক খেলে কোনো সমস্যা হয় না। জেনে রাখুন বাড়ির একজনের কৃমির সমস্যা থাকলে বাকিদের মাঝে তা ছড়াবেই। তাই একসঙ্গে সবারই নির্দিষ্ট বিরতিতে কৃমির ওষুধ সেবন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে আসা গৃহকর্মীও যেন বাদ না পড়ে। আলো-বাতাসযুক্ত পরিচ্ছন্ন টয়লেট ও বাথরুম ব্যবহার করুন। এটি যেন স্যাঁতসেঁতে না থাকে। টয়লেট ব্যবহারের পর শিশুকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করান। এমনকি নখের ভেতরও যাতে ময়লা না জমে। শিশুরা আঙুল মুখে দেয় বলে তাদের নখ নিয়মিত কেটে দিন। শিশু যদি মলদ্বারে চুলকায় তবে তার হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে দেবেন।

বৃষ্টি না হলে কৃমিনাশক খাওয়া যায় না বা মিষ্টি খাওয়ার সাথে কৃমির কোন সম্পর্ক নাই। গরমে কৃমির ঔষধ খাওয়া যাবে না এটা ভ্রান্ত ধারণা। গরম, শীত, বর্ষা যেকোনো সময়ই কৃমিনাশক খাওয়া যাবে। অনেক সময় কৃমিনাশক খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার যে খবর পাওয়া যায়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা ও কুসংস্কারজনিত। তবে খাওয়ার পর বা ভরা পেটে খাওয়া ভালো। কৃমিনাশক নিরাপদ ওষুধ। এর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কারও কারও পেট ফাঁপা বা বমি ভাব হতে পারে।

কৃমি মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় বিধায় পরিবারের সকলে একসাথে কৃমির ঔষধ খাওয়া উচিত।

একই দিনে বাড়ির সব সদস্যের কৃমির ওষুধ খেয়ে নেওয়া একটি-

“কৃমি মুক্ত জীবনের জন্য ভালো চর্চা”।