স্ক্যাবিস

চুলকানিযুক্ত ত্বকের অবস্থা যা “সারকোপ্টেস স্ক্যাবিই”, একটি ক্ষুদ্র “বরোজিং মাইট”- দ্বারা সৃষ্ট হয়। স্ক্যাবিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাইটের গর্তের জায়গায় তীব্র চুলকানি অনুভব করে। স্ক্যাবিস শরীরের সেই অংশে চুলকানি এবং ফুসকুড়ি সৃষ্টি করতে পারে যেখানে এই মাইটগুলি জমে থাকে। সংক্রমণটি ক্রমাগত চুলকানি এবং তীব্র ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে কারণ মাইটগুলি ত্বকের ভিতরে ডিম পাড়ে। রাতে চুলকানির মাত্রা তীব্র হয় কেননা তখন মাইট গুলি তাদের করা গর্তে ডিম পাড়ে।

এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে শিশুদের। প্রচন্ড চুলকানির ফলে শরীরে অনেক অস্বস্তি হয়। রাতেই এই সমস্যা বেশি হয় ফলশ্রুতিতে শিশুরা সারারাত ঘুমাতে পারে না। ক্ষুদ্র ইচ মাইট, এটি একটি ৮’পা যুক্ত পোকা। অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ। একে খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মানুষের ত্বককে এরা প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এরা ত্বকের নিচে রাতে প্রবেশ করে ডিম পাড়ে। যখন ডিম পাড়ে তখন তীব্র চুলকানী সৃষ্টি হয়। শিশু ও বয়স্কদের এরা তাদের আক্রমনের লক্ষ্য হিসাবে ধরে নেয়। আক্রান্ত স্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে এটি জটিল হয়। হার্টের রোগ, সেপ্টিসেমিয়া এমনকি সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হয় যখন কিডনি আক্রান্ত হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে কিডনি ফেইলুর এবং অন্যান্য কিডনি জটিলতার অন্যতম কারন এই স্ক্যাবিস । শতশত শিশু কিডনি ফেইলুর/নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম  নিয়ে প্রতিবছর  শিশু হাস্পাতাল এবং কিডনী হাস্পাতালে চিকিৎসা নেয় শুধু মাত্র এই স্ক্যাবিস কে অবহেলা বা অবজ্ঞা করার করার জন্য।

ইচ মাইটগুলোর মৃত্যু হলেই সংক্রমণ সেরে যায়। কিন্তু চিকিৎসা না করলে এই পোকাগুলো অনায়াসে আরো বংশবিস্তার করে। অন্যান্য সমস্যার বৃদ্ধি ঘটায়। প্রথমে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে পরে ঘাড়ে, নাভির আশে পাশে চামড়ায়, লজ্জাস্থানের আশেপাশে ও পায়ে ছড়িয়ে আক্রান্ত হয়। চুলকানোর জায়গা একটু ফোসকা পড়ে লাল হয়ে ফুলে যায় এবং ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। “ইচ মাইট” একজন মানুষ থেকে অন্যজনের মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে, এটি হতে পারে সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমে, অথবা অন্যের বিছানা, কাপড় বা আসবাবপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে। রোগীর ব্যবহৃত কাপড় গামছা, বিছানার চাদর ও বালিশ ব্যবহার করলে এই রোগ হতে পারে। একইভাবে, এই পোকাগুলো মায়ের থেকে সদ্যোজাতের শরীরে যেতে পারে। এ জন্য মা কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সদ্যজাত সন্তান আক্রান্ত হলে

চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয় পরে।

চামড়ার সংস্পর্শ ছাড়া ছাড়া এই পোকা ৩-৪ দিন অবধি বেঁচে থাকে।

স্ক্যাবিস প্রতিরোধের জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর সবকিছু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে। পরিষ্কার বিছানা ও কাপড়ের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় কাপড় ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া অযোগ্য কাপড়্গুলি একটি প্লাস্টিক ব্যাগে মুখ বন্ধ করে সপ্তাহ খানেক ব্যাগটি কয়েক আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করুন অথবা রোদে ফেলে রাখলে খাদ্যর অভাবে এবং প্রচন্ড তাপে মাইটস কিছু দিন পর না খেয়ে মারা যাবে।

প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ক্রিম, লোশন ও ট্যাবলেট ব্যবহারের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এর জন্য উপযুক্ত লোশন, ক্রিম বা ট্যাবলেটের নির্দেশ চিকিসকের কাছ থেকে নিতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও পার্টনারের জন্যও একই চিকিৎসার পরামর্শ মেনে চলতে হবে। চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার পর আবার চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দিলে পুনরায় চিকিৎসা শুরু করতে হবে। বুঝতে হবে কোন একটি সোর্স থেকে পুনরায় মাইটস আবার ছড়িয়ে পরছে। কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চললেই একে রুখে দেওয়া সম্ভব।

পার্মেথ্রিন ক্রিম বা লোশন ঘাড়ের নিচ থেকে পুরো শরীরে প্রয়োগ করতে হয় এবং  রাতারাতি রেখে পরদিন সকালে গড়ম পানি,সাবান দিয়ে ভাল মত সারা শরীর স্ক্র্যাবার দিয়ে স্ক্র্যাব করে গোসল করে নিতে হবে। সপ্তাহ খানেক স্ক্র্যাব করে গোসল করলে শরীরের চামড়া গুলি ঝকঝকে হয়ে সজীব হয়ে উঠবে-কোন মাইটস,ব্যাক্টেরিয়া থাকলে তাও চলে যাবে। ব্যাবহারের নিয়মাবলি ঔষধের সাথে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা থাকে, ঐ নিয়মেই ব্যাবহার করলে ফল পাওয়া যাবে।

স্ক্যাবিস হয়েছে এমন কারো সরাসরি সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের মাইটস একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। পরিবার, হোস্টেল, মাদ্রাসায় একজন আক্রান্ত হলে দেখা যায় বাকি সদস্যরাও আক্রান্ত হয়। যারা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি এলাকা, হোস্টেল, মাদ্রাসায় যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকে এমন পরিবেশে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া খুব বেশি ছড়ায়। সঠিক চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে বিভিন্ন জটিলতা বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে কিডনিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তবে চিকিৎসা নেবার সময় এটা লক্ষ্য থাকতে হবে যে শুধু মাত্র ঔষধ নয়, পরিধেয় কাপড় ও ব্যাবহারের কাপড় সহ বিছানা পত্রাদি নিয়মঅনুযায়ী “মাইট” মুক্ত করার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ম অনুযায়ী নিতে হবে অন্যথা আশানুরূপ স্ক্যাবিস মুক্ত শরীর পাওয়া কঠিন হবে।

চিকিৎসা না করালে বছরের পর বছর এটি দেহে থাকে যায় পরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়।

গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত কথায় এটি কে বলা হয় , “সাত বছরের চুলকানী”।