কানের “ওয়াক্স” যেটা প্রচলিত ভাষায় কানের “খৈল” নামে পরিচিত।
কানের তিনটি অংশ থাকে।
১) বহিঃকর্ণ(কানের সরু পথ ও বাহিরের কিছু অংশের সমন্বয়), ২) মধ্যকর্ণ (মাঝের অংশ যা আমরা দেখি না) এবং ৩) অন্তঃকর্ণ (একদম ভেতরের অংশ)
মানব দেহে খুদ্র খুদ্র অসংখ্য গ্রন্থি আছে। এই গ্রন্থি গুলির কাজ ক্রমাগতভাবে শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বা বলা যেতে পারে “বর্জ্য” পদার্থগুলো ঘাম অথবা তরল নিঃসরণের মাধ্যমে বের করে দেওয়া। কানে থাকা গ্রন্থিগুলো থেকে একধরণের তেল জাতীয় আঠালো পদার্থ নির্গত করে। এর সাথে যুক্ত হয়ে যায় মরা চামড়া এবং বাতাসে উড়তে থাকা ধূলিকণা। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে প্রতিনিয়ত-প্রতিদিন এই ভাবে একের পর এক স্তর জমতে জমতে “খৈল”-এ পরিণত হয়। এই স্তর গুলি “খৈল” এর মত খয়েরি রঙ ধারন করার ফলে আমরা এটাকে চলতি ভাষায় “খৈল” বলি। আবার অনেক সময় এটা হলদে বা গাড় কাল রঙের ও হয়। রঙ যাই হউক এটাকেই সাধারনত “খৈল” বলা হয়। কানের যে গ্রন্থি এই নিঃসরণের কাজে ব্যাস্ত থাকে সেটার নাম,“সিবাসিয়াস” গ্রন্থি। আর এই গ্রন্থির নিঃসরণের নাম, “সেরুমেন”। “খৈল”- শক্ত হবে না নরম হবে তার অনেকটাই নির্ভর করে “সেরুমেন” নিঃসরণের উপড়। বেশী হলে নরম হবে কম হলে শক্ত হবে।
শরীর নিজ প্রক্রিয়া থেকেই কান থেকে ওয়াক্স বের করে দেয় । খাবার খাবার সময় বা কথা বলার সময় এমন কি হাঁচি-কাশীর সময় মুখ নড়াচারা করে- এই নড়াচড়ার সময় “খৈল” নিজেই বের হয়ে আসে তা ছাড়া গোসল করার সময় কান পরিষ্কার করাও মুখ্য ভুমিকা পালন করে “খৈল” না জমার জন্য।
কানের ভেতর “খৈল” অনেক কারনেই জমে তবে মূলত “খৈল” জমার কারন “সেরুমেন” কম বা বেশি নিঃসরণ হবার কারনে অথবা কানের ভেতর লোম শক্ত থাকার কারনে অথবা খুব ধুলা বালি পরিবেশে কাজ বা থাকার কারনে বা অনেকের বহিঃকর্ণ পথটি সরু হবার কারনে তা’ছাড়া
কিছু কিছু চর্ম রোগের কারনেও হতে পারে। “সেবোরিক ডার্মাটাইটিস”-চর্ম রোগের কারনেও “খৈল” জমে।
“খইল”-জমে যাওয়ার যেমন অপকারিতা রইয়েছে আবার উপকার ও রয়েছে। কিন্তু আবার একে পরিষ্কার ও করে ফেলতে হয়। বেশী জমে যাওয়ার কারনেই সমস্যা হয়। “খৈল”- কান কে হায়ড্রেটেড অর্থাৎ ভেজা-ভেজা রাখে,আঠালো থাকায় ধুলি-বালি-ময়লা কে ঢুকতে বাঁধা দেয় আর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে এই “খৈল”-এর এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল ক্ষমতা রয়েছে ফলে কানের ইনফেকশন প্রতিরোধে প্রাথমিক ভাবে বাঁধা গ্রস্ত করার ক্ষমতা “খৈল” রাখে।
“খৈল” বেশী হলে মূল সমস্যা হয়- কান বন্ধ হয়ে যায়,কান বন্ধ থাকার কারনে কথা শুনতে অসুবিধা হয় সাথে ব্যাথা সহ চুলকানী ও একধরনের অস্বস্তি অনুভব হয় এমন কি মাথা ঘোড়ানো সহ একটানা কানে সো সো আওয়াজ ও শোনা যায়।
বড়দের চেয়ে শিশুদের কানের “খৈল” জমা জটিল। না কানে হাত দিতে দেয় না বের বা কান পরিষ্কার করতে দেয়। আবার বের করতে যেয়ে হিতে বিপরীত ও হয়- কানের পর্দা ছিড়ে যায় বা আঘাত প্রাপ্ত হয়। এই জন্য কানে হাত দিতে মানা করা হয়।
বেশির ভাগ সময় শক্ত হয়ে যাওয়া খৈল নরম করার জন্য পাঁচ থেকে সাতদিন অলিভ তেল দিনে দু তিন ফোটা দুইবার করে দিলে “খৈল” আস্তে আস্তে নরম হয়ে যায়। তারপর সাধারণত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় “খৈল” নিজেই আস্তে আস্তে বের হয়ে আসে তবে শিশুর মা’কে খেয়াল রাখতে হবে। কান পরিষ্কারের জন্য “ইয়ার বাডস” ব্যবহার করা একদম উচিত নয়। এটা দিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে “খৈল” আরো কানের ভেতরে ঢুকে যাবে। ইয়ার বাডস ভেঙ্গে গিয়ে আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বা কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বেশী সমস্যা হয়ে গেলে হাস্পাতালে সিরিঞ্জিং,সাকশন বা চিমটি জাতীয় জিনিষ দিয়ে “খৈল” বের করে আনা হয়। এটা চিকিৎসক কে
দিয়ে করাতে হবে। ওয়াক্স বা খৈল খুব সাধারণ একটি বিষয়। কান নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে এটা জমার কোন সম্ভবনা নেই যদি না কোন রোগের কারনে এটা হয়ে থাকে। শৈশবে আমাদের মা’য়েরা আমাদের কোলে বসিয়ে রেখে মাথার ক্লিপ দিয়ে বেশ দক্ষতার সাথেই কানে খৈল পরিষ্কার করে দিতেন।
এখন খৈল নরম করার জন্য কানের ড্রপ আছে। এটি মূলত “পারক্সাইড” জাতীয় তরল পদার্থ। এটি বহু পুরানো ঔষধ কানে ব্যাবহারের জন্য। ২
থেকে ৩-৪ ড্রপ শিশুদের জন্য-বড়দের জন্য ৭ থেকে ৮ ড্রপ- দিনে দুইবার দিলে খইল নরম হয়ে আসে তবে কোন মতেই একনাগারে চার দিনের বেশী ব্যবহার করা অনুচিত। এটি ব্যবহারের সময় কানের ভেতর এক ধরনের ‘ফরফর’ জাতীয় শব্দ হয়,সাবানের ফেনার মত সামায় ফেনার সৃষ্টি হয় কান ভারি ভারি মনে হয় বা চুলকানী হতে পারে তবে সেটা একদম খুব ই সাময়িক ও তাৎক্ষণিক। ড্রপ ব্যাবহারের পর আর খৈল বের করার জন্য কোন প্রচেষ্টা নিতে হবে না, স্বাভাবিক ভাবে এটা আস্তে আস্তে নিজে নিজেই বের হয়ে আসবে।
তবে চিকিৎসকের পরামশ নিয়েই এটা ব্যাবহার করতে হবে। কানে ইনফেকশন বা পর্দা ছিড়া থাকলে ব্যাবহার করা অবশ্যই অনুচিত।